লেলিন

লেলিন মহাশয় এর ছবি , আর ঝোলে না ।
—————————————————
অষ্ট দশে পৌছালাম ,
রুশ কন্যার দেশে ,
শ্বেতাঙ্গিনী কন্যা
গোলাপি ঠোঁট ,
সোনালী চুল ,
আকুয়া চোখ ।
কথা বলা হলো না কন্যার সাথে ,
ভাষা জানিনা বলে ,
কন্যা আমাকে পেয়ে অনেক খুশি হলো ।
পরে কন্যা ;
আমাকে কন্যার ,
দেশের ভাষা শিখালো ।
কালচার শিখালো ।
কাঁটাচামচ ধরা , শব্দ না করে খাওয়া শিখালো ।
শীতের দেশে হাত মোজা খুলে নগ্ন হাতে , হাত ধরে বাস থেকে নামানো শিখালো ।
কন্যাকে,
বা পাশে রেখে , হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো শিখালো । সপ্তাহ শেষে ,
কন্যা ;
আমাকে পেয়ে এত খুশি হতো তখন ,
কন্যাকে ,
নিয়ে ঘুরতাম ।
সারা রাত ভরে ,
সারা শহরতলী ধরে , তখন ,
কন্যার ,
দেশের , সবাই সাম্যবাদের কথা বলতো ।
রাজা মন্ত্রীরা ঘুষ খেতে , লুটপাট করতে ।
পুলিশ ঘুষ খেতে ।
সন্ত্রাসী সরকার , সন্ত্রাসী রাজনৈতিক কর্মকর্তা এবং সন্ত্রাসীরা ঘুষ খেতে ও মস্তানি করতে ।
সন্ত্রাসীরা , রুশদেশের আর্মিকে তখন কঙ্কাল বানিয়ে দিয়েছিল ।
সন্ত্রাসীদের মনে সবসময় ভয় থাকতো যদি আর্মিরা দেশকে নিয়ে ।
সে জন্যই ওরা আর্মিকে কঙ্কাল বানিয়ে রাখ বানিয়ে দিয়েছিল ।
সন্ত্রাসীরা ,
তখন রুশদেশের আর্মিরা এতই কঙ্কাল ছিল যে , আফগানিস্তানের সাথে যুদ্ধে হেরে গেল ।
কন্যার ,
সন্ত্রাসীরা ,দেশের সম্পত্তি লুট করে,বিদেশে পাড়ি জমাতো ।
রাজার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে রাজা তাকে জেলে ঢুকিয়ে রাখতে ।
ওরা সবাই গরিবের অর্থ নিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পণ্য রপ্তানী করত ।
গরিবরা শুধু কালো রুটিও মদ খেত ।
রাজা সবাইকে মদ দিয়ে মাতাল বানিয়ে রাখত । এতে , কন্যার ,
অনেক কষ্ট হতো । এতে ,
কন্যার ,
অনেক মন খারাপ হতো ।ভালোবাসার জ্বালায়
কন্যার ,
সব বান্ধবীরা , আমার বন্ধুদের হাত ধরে
কন্যার ,
দেশ ছেড়ে চলে গেল । যখন ঘুরতাম ,
কন্যাকে ,
নিয়ে , সারা রাত ভরে , তখন দেখতাম –
সারাদেশে শুধু –
লেলিনের স্থাপত্য ।
সোনা রুপা আরো কত কি দামি দামি জিনিস তৈরি লেলিনের স্থাপত্য ।
লেলিনের , নামে বাড়ি , গাড়ি , কল , কারখানা সবই থাকত উৎসর্গ করা ।
লেলিনের , ছবি সরকারি-বেসরকারি অফিস , বিদ্যাপীঠ , লাইব্রেরী প্রায় সব জায়গাতেই সুন্দর যত্নসহকারে ঝুলানো থাকতো।
লেলিন মহামানব ।
লেলিন সাম্যবাদের নায়ক ।
কন্যাকে ,
নিয়ে পানিও খেতাম –
লেনিনের নাম বলে ।
হঠাৎ নব্বই দশকে কি যে হল ,
কন্যার ,
দেশে সবকিছু উল্টাপাল্টা হল ।
রাজা মরে গেল ।
লেলিনের মূর্তি স্থাপত্যিক সব ভেঙে দিল ।
লেনিনের নাম সব জায়গা থেকে মুছে দিল ।
লেলিনকে ‘ চোর-ডাকাত -মস্তান- ‘ সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করল ।
লেলিনকে পায়ের নিচে পিষ্ট করে দিল । আসলে ,
সন্ত্রাসীরা –
লেলিনের নাম ব্যবহার করত নিজেদের স্বার্থে ।
সন্ত্রাসীরা –
লেলিনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে , সমস্ত অন্যায়-অপরাধ করতো । আমার
কন্যাকে ,
আমার সাথে আনা হলো না ।
কন্যা ,
অনেক কষ্ট পেল ,
কন্যা , হারিয়ে গেল ।
পরে , অনেক পরে , আবার গেলাম
কন্যার দেশে ,
কন্যার খোঁজে ,
সারা দেশ ঘুরে ঘুরে খুজলাম –
কন্যাকে ,
কোথাও পেলাম না
কন্যাকে ।
কন্যা ,
আমার হারিয়ে গেছে ,
সারা জীবনের তরে ।
অনেক চিৎকার করে ডাকলাম –
কন্যাকে ,
আমার চিৎকার শুনে ,
কন্যার ,
দেশের সবাই জড়ো হল ।সবাই বলতে থাকলো –
‘ লেলিন ও তার সহযোগীরা ‘আমাদের ৪৭ বছর কেড়ে নিয়েছে।
আমাদের সব সম্পত্তি চুরি , লুটপাট করেছে ।
লেলিন তার সহযোগীরা আসলে সন্ত্রাসী ছিল ।
লেলিনের ‘ ফলোয়ার ‘ সবাই মিলে ডাকাতি , সন্ত্রাস , অপকর্ম করে ধনী হওয়ার চেষ্টা করেছিল ।
লেনিনের নাম আমরা মুছে দিয়েছি ।
লেলিন ও তার সহযোগীদের মুখে জুতা মারি ।
লেনিনের নাম স্থাপত্য কোথাও কোন কিছু নাই ।
লেলিন মহাশয় এর ছবি আমরা গার্বেজ করে দিয়েছি ।
লেলিন মহাশয় এর ছবি , আর ঝোলে না ।
রেজা সাত্তার ।
( এই কবিতার কপিরাইটের অধিকারী) ।