প্রিন্স ( ( প্রবন্ধ )
——————
“ ওই সকালে আইসা পয়লা প্রিন্সের লাইগা , পরোডা বানাইয়া সাইট , কইরা রাখবি ; প্রিন্সের পরোডা যেন কেউ যেন না ধরে “ ।
আমি জানি , আমার ওস্তাদ সকালে এসে , এটা আমাকে বলবে , ওস্তাদ বলার আগেই আমি সকালে এসে প্রিন্সের জন্য পরোটা বানানোর জন্য রেডি হয়ে থাকি।
এটা একটা রাস্তার পাশে , ছোট্ট হোটেল । রিক্সাওয়ালারা প্রধানত আমাদের দোকানের ক্রেতা । ওস্তাদ দোকানের মালিক , আমি এখানে পরোটা বানাই । আমি পঞ্চম ক্লাস পাস করেছি ।
প্রিন্স একটা ঘোড়ার নাম । ছোটবেলায় প্রিন্সের ,
এক্সিডেন্ট হয়ে পা ভেঙে যায় , পা ভেঙে যাওয়ার জন্য; ওর মালিক আমাদের এলাকায় ওকে ফেলে রেখে চলে যায় । স্থানীয় লোকজনরা ওকে ভালোবাসা দিয়ে এবং চিকিৎসা দিয়ে ওকে সুস্থ করে তোলে ।
প্রিন্স আমাদের এই পাশের বাগানে থাকে , এলাকার লোকেরা , ওকে খুব ভালোবাসে । প্রিন্স , সারাদিন এখান দিয়ে ঘোরাফেরা করে , সবাই ওকে খাওয়ায় এবং আদর করে। আমার ওস্তাদের প্রাণপ্রিয় প্রিন্স ।
সকালে আমরা প্রিন্সকে ব্রাঞ্চ খাইয়ে দিই ।‘ ব্রাঞ্চ ‘- লাঞ্চ এবং ব্রেকফাস্ট এর মাঝামাঝি খাবার । প্রিন্সের আসার সময় হলে ; প্রিন্সের আসতে দেরি হলে , ওস্তাদ দোকানের সামনে হাটতে থাকে , আর ওস্তাদের মাথা গরম হতে থাকে । আমাকে কয়েকবার আমাকে জিজ্ঞেস করবে “ ওই প্রিন্স আইতাছে না ক্কিল্লাই ? ওর দেরি হইতেছে কিল্লাই ? “ প্রিন্স , আসার সময় হলে , আমরা ওস্তাদের সাথে কথা বলি না , ওস্তাদের মেজাজ ওই সময় খুব গরম থাকে । দোকানের সামনে দাঁড়ায় থাকে অর ওস্তাদ প্রিন্স জন্য ওয়েট করতে থাকে , এসময় আমরা সবাই সময় চুপচাপ থাকি ; তখন ওস্তাদ আমাকে অনেকবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে ।
ওস্তাদ যখন দেখবে যে , প্রিন্স আসছে , দূরে থেকে , তাখন খুব খুশি ওস্তাদ । রাগান্বিত ওস্তাদের শরীরটা তখন ঠান্ডা হয়ে যায় । “আমাগোর প্রিন্স আইতাছে “ । প্রিন্স আসলেই প্রথমে , ওস্তাদ প্রিন্স কে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ , আদর করে , চুমু খায় , তারপরে বলে “ ওই প্রিন্সের পরোডা দে “ । পরে ওস্তাদ নিজের হাতে পরোটা গুলি প্রিন্স কে খাওয়াবে , প্রিন্সও ওস্তাদের হাত থেকে একটার পর একটা পরোটা খাবে । এখন করোনাভাইরাস ।
হোটেল বন্ধ ।
আমি আর রুটি বানাই না ।
ওস্তাদ পাউরুটি নিয়ে , দুইবার প্রিন্সকে রুটি খাওয়াতে গিয়েছিল পার্কে ; পুলিশ ওস্তাদকে , লাঠিপেটা করে বাসায় ফিরিয়ে দিয়েছে ।
ওস্তাদ আমাকে ফোন করে মাঝে মাঝে ।
ওস্তাদ বলে “ আমার শরীরটা খুব খারাপ হয়ে যাইতাছে প্রিন্সের লাইগা । এখন , ‘ করোনাভাইরাস’ এর জন্য অনেক ত্রাণ আইতাছে , নেতাকর্মীরা , সরকারি আমলারা , মস্তান মন্ত্রীরা , হগলে এখন লুটে ব্যস্ত থাকবো । এডা দেশ চালানোর সিস্টেম “ ।
ওস্তাদের খুব চিন্তা –
প্রিন্স এখন পার্কে ,
প্রিন্সের যদি কিছু হয় ?
প্রিন্স এখন খাবার পায় কি না !
ওস্তাদ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে –
ওস্তাদ কেমন মানুষ আমি জানি না ।
ওস্তাদ শুধু একটা হোটেলের মালিক ; ধনী না ।
( আমাদের হোটেলের কি হবে ?
আমরা কি খাবো ) ?
ওস্তাদের সেটা নিয়ে কোন চিন্তা নেই ।
ওস্তাদের সমস্ত চিন্তা প্রিন্সকে নিয়ে ।
ওস্তাদের জন্য পরাণ পুড়ে ।
প্রিন্সের জন্যও পরাণ পুড়ে ।
রেজা সাত্তার ।