করোনাভাইরাস ‘ প্রকৃতিকে প্রকৃতির কাছে ফেরত :

করোনাভাইরাস ‘ প্রকৃতিকে প্রকৃতির কাছে ফেরত :
———————————————————
( প্রবন্ধ )
আমরা পৃথিবীর মানব প্রাণী যখন বড় একটা কিছু করি যেমন , বড় একটা অট্টালিকা বা ব্রিজ বানাই ; তখন আমরা মানব প্রাণী অনেক খুশি হয়ে যাই ।
প্রকৃতি কথা বলতে পারেনা । প্রকৃতির অন্য, কোন প্রাণীও কথা বলতে পারে না । একমাত্র শুধু মানব প্রাণী কথা বলতে পারে । এখন দেখো , আমরা যখন বড় একটা অট্টালিকা বানিয়ে অনেক খুশি হই ; প্রকৃতি কি তখন খুশি হয় ? তখন এটা প্রকৃতির জন্য একটা পরাজয় । প্রকৃতি চায় , প্রকৃতির মতো থাকতে । আমরা কি প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো থাকতে দিয়েছি ?
নর্থ আমেরিকাতে এবং আমেরিকাতে প্রথম যখন ‘ আংলো- ফ্রান্স’ ওরা আসলো , শুরুতে এখানকার আদিবাসী নেটিভদের সাথে ‘ আংলো- ফ্রান্সদের’ সম্পর্কটা ভালই ছিল , পরে এই সম্পর্কটা একে অপরের প্রতি শত্রুতে পরিবর্তিত হয়ে গেল ।
‘ নেটিভরা’ চেয়েছিল প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো রাখতে , কিন্তু ‘ আংলো- ফ্রান্স’ রা এটা মানে নি । তখন ‘ আংলো- ফ্রান্স’ রা ওদের ( নেটিভদের ) গ্রামের , পর গ্রাম পুড়িয়ে দিল ; মেরে ফেললো ; জীবিত বা মৃত কবর দিল , অত্যাচার করল ।
আমি এখন অন্টারিও ‘ স্কারবরো’ তে থাকি আমার একটু দূরেই যে বিশাল জায়গাগুলো যেখানে কানাডিয়ান সরকার এখন লম্বা লম্বা অট্টালিকা তুলেছে । ‘ আংলো ফ্রান্স’ নেটিভ দের সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করে নি । ‘ আংলো – ফ্রান্সরের’ – বাহিনী ওদের কে হত্যা করে এই জায়গাগুলি উন্নত করেছিল । ওরা প্রকৃতিকে ভালোবাসে । তখন , সারা বিশ্ব প্রায় ‘ আংলো – ফ্রান্সরের’ কলোনি ছিল । ওরা পৃথিবী থেকে টাকা লুট করে আনলো ; প্লাস কালোদের দাস হিসেবে নিয়ে আসলো । এই উন্নত বিশ্বোটা , কিন্তু তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ কলোনিয়াল আমলের টাকা দিয়ে । কালোদের কে হত্যা বা অত্যাচার করত ।
আমরা হয়তোবা ‘ কামাগাথি মারু / Komagata Maru’ এই ঘটনাটা জানি ‘ ব্রিটিশের শ্বসনের সময় ব্রিটিশ কুইন বলেছিল ; ( All British’s are equal subject ) ‘ সব ব্রিটিশের সমান অধিকার ‘ ; তার পরিপ্রেক্ষিতে পাঞ্জাব থেকে জাহাজে করে এক জাহাজ পাঞ্জাবীরা কানাডাতে এসেছিল । কিন্তু , তখন ব্রিটিশ কুইন ওদেরকে জাহাজে রেখে মেরে ফেলে ও বের করে দেয় এ দেশ থেকে ।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হলো , প্রথম মহাযুদ্ধ হলো , ওরা বাধ্য হয়ে আমাদেরকে আনলো ।এখন আমেরিকাতে এবং নর্থ আমেরিকাতে বেশিরভাগই মানুষ প্রাণী , অন্যান্য দেশের থেকে এখানে এসেছে ; এদের কিন্তু কোন অবদান নেই , বলা যেতে পারে । এত সুন্দর দেশ ; আমরা উপকার উপভোগ করছি এখন ; এদেশের রাস্তাঘাট , বাড়ি – এগুলি তো আমরা বানাইনি ; কোন টাকাও দেয়নি ; এগুলি আমরা উপভোগ করছি , কিন্তু ।
পৃথিবীটা এমনই আপনি যার জন্য জিনিসটা করে যাবেন , আপনার উত্তরাধিকার সে জিনিসটা পাবে কিনা জানেন না ! অবশেষে পাবেনা ।
এটা বলার উদ্দেশ্য হলো যে , আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করে পৃথিবী নির্মাণ করছি , এটা কিন্তু পৃথিবীর পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ প্রাণী কিন্তু উপভোগ করতে পারবে না ।
এটা বলার আরও উদ্দেশ্য এই যে , প্রকৃতিটাকে বোঝানোর জন্য । প্রকৃতিতে প্রকৃতিক দুর্যোগ হলে আমরা যখন বলি – ‘ প্রকৃতিক দুর্যোগ ‘ । প্রকৃতি তখন কি বলবে এটা ‘ প্রকৃতির দুর্যোগ’ ? প্রকৃতি তখন বলবে এটা ওদের প্রতিশোধ বা ওদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ।আমরা প্রকৃতিটাকে ধ্বংস করে ফেলেছি ।
‘ করোনাভাইরাস ‘ – প্রকৃতির প্রকৃতি কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটা অবলম্বন ।
‘ করোনাভাইরাস’ এর পরে , পৃথিবীর প্রকৃতি অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে । এত সুন্দর নীল আকাশ আগে কখনো দেখিনি , এখন নীল আকাশ – বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড কমে গেছে , সমুদ্রের পানি পরিষ্কার হয়ে গেছে , ডলফিন কক্সবাজারে এসে পড়েছে । ‘ উড বাইন’ সৈকতের স্বচ্ছ মাছ গুলি দেখা যায় । এতে কি মনে হয় না যে , প্রকৃতি তার নিজের জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে। প্রকৃতি আর চাচ্ছে না , যে ওকে আমরা এইভাবে আর ধ্বংস করি । প্রকৃতি আর পারছে না , আমাদের সাথে ।
‘ আমি যখন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাই ; তখন চোখে দেখি , কত রাকুন , কাঠবিড়ালি গাড়ির চাকার নিচে পৃষ্ঠ হয়ে গেছে । আমরা কখনো চিন্তা করিনা যে গাড়ি ব্রেক করে ওদের জীবন বাঁচাতে । বা প্রকৃতিকে ভেঙে রাস্তা বানানোর দরকার ছিল কিনা ‘ ?
প্রশ্ন এই রাস্তার নিচে যে মাটিটা , ওই মাটির মালিক প্রকৃতি । রাস্তার মালিক আমরা হতে পারি , ওই রাস্তায় প্রকৃতির অধিকার আছে । সবার অধিকার আছে এই রাস্তায় হাঁটার , কিন্তু আমরা এই রাস্তাটা করেছি শুধুমাত্র আমাদের জন্য ।
বন্যপ্রাণী কথা বলতে পারে না , ওরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে । অন্য প্রাণীরাও দেখে চুপচাপ করে । তাই ‘ করোনাভাইরাস’ প্রকৃতির একটা নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার ; একটা অবলম্বন ।
আমি উদাহরণ দিতে পারি ভারত সরকার ‘ সেভেন সিস্টার ‘ রাজ্য সরকারের – সাথে অনেক চিঠি লেখা – লিখি করে ; অনেক রাজনীতি করেও ; ‘ সেভেন সিস্টারের ‘ প্রকৃতিকে ভাঙতে পারে নাই । ‘ সেভেন সিস্টারের’ মানুষগুলি বাঙ্গালী বলা যায় , ওরা প্রকৃতিকে ভালবাসে । কিন্তু আমরা সেভেন সিস্টারের মানুষগুলোকে ‘ খ্যাত’ বলি বা অনুন্নত বিশ্ব বলি ।
মানব প্রাণী যতই চেষ্টা করুক না কেন , প্রকৃতির সাথে একপর্যায়ে মানব প্রাণী হেরে যাবে । যদি ‘ করোনাভাইরাস ‘ ২০২২ সাল পর্যন্ত আরো থাকে ? যদি ‘ করোনাভাইরাস ‘ পৃথিবীর মানব প্রাণীকে এখান থেকে সম্পূর্ণ তুলে নিয়ে যায় ? যদি প্রকৃতিকে প্রকৃতির কাছে ফিরিয়ে দেয় ? আমি মনে করি সেটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া হবে প্রকৃতির ।যদি ‘ করোনাভাইরাস’ থেমে যায় , আমরা কি প্রকৃতিকে ধ্বংস করা বন্ধ করব ?
করোনাভাইরাস ‘ এটা প্রকৃতির বেঁচে থাকার অবলম্বন । আর সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে ভুল হয়েছিল মানুষ প্রাণীকে সৃষ্টি করা ।
রেজা সাত্তার ।
( Author reserve all copy-right )